বরফ গলে পানি হয়, পানি আরও উত্তপ্ত করলে বাষ্প হয়। শুধু পানি নয় কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, লোহা, সোনা, রুপা, তামা সবকিছুর নিয়মই এমন। কিন্তু সবকিছু মানে সবকিছু নয়, কাঠ বা কাগজের মত জিনিস তাপপ্রয়োগে তরল হতে দেখা যায় না। তবে কি তাপপ্রয়োগে পদার্থ গলে যাওয়ার নিয়মে কোন গলদ আছে?
তাপপ্রয়োগের ফলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পদার্থ কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হয়। এই নিয়মে কোন ভুল নেই। এ হিসেব কাঠও একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পর গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছানোর আগেই বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সাহায্য নিয়ে কাঠ পুড়তে শুরু করে। পুড়ে যাওয়া একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। বলা যায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাঠ অন্য ধরনের রাসায়নিক পদার্থে পরিণত হয়। এ ধরনের বিক্রিয়াকে বলা হয় দহন বিক্রিয়া। দহন বিক্রিয়ায় তাপ এবং আলো নির্গত হয় যেটাকে আমরা অগ্নিশিখা বলি।
কাঠ আগুনে পুড়ে কয়লায় পরিণত হয়, সেই সাথে পানির বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথানল তৈরি হয়। গলে যাওয়া পানিকে ঠাণ্ডা করে আবার বরফে পরিণত করা গেলেও কাঠকয়লা এবং ছাইকে আর কাঠে পরিণত করা যায় না।
কাঠের তাপমাত্রা বাড়াতে শুরু করলে মোটামুটিভাবে ২৬০ থেকে ৩১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঠের উপাদানগুলো ভাঙতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় পাইরোলসিস। এটি নিজেও তাপোৎপাদী বিক্রিয়া, অর্থাৎ নিজে থেকে তাপ নির্গমন করতে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় ১০০ টি পর্যন্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হতে পারে যার মধ্যে মিথেন এবং মিথানলের মত রাসায়নিক রয়েছে। এগুলো দাহ্য পদার্থ এবং শিখা তৈরির মাধ্যমে জ্বলতে শুরু করে। এ অবস্থায় ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম আর পটাশিয়ামের মত রাসায়নিকগুলো নিচে পড়ে থাকে। কাঠের বড় অংশ কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরির মাধ্যমে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আর ধোঁয়া সৃষ্টি হয় কাঠে থাকা অন্যান্য অপদ্রব্যগুলোর কারণে।
অনেক বলতে পারেন, মিথানল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল, ম্যাগনেসিয়াম আর ক্যালসিয়ামের মত পদার্থগুলোকেও তরল করা যায়, অতএব কাঠকে তরল করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কাঠ পোড়ানোর পর যা অবশিষ্ট থাকে তা মোটেও কাঠ নয়। গলে যাওয়া পানি ঠাণ্ডা করে আবার বরফ তৈরি করা যায়, কিন্তু ছাই বা কয়লা ঠাণ্ডা করে কাঠ তৈরি করা যায় না।