মানবদেহের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াগুলোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রা হল ৩৭০ সেলসিয়াস বা ৯৮.৬০ ফারেনহাইট। সহজ ভাষায় তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বা কম কোনটাই মানবদেহের জন্য সুবিধাজনক নয়। আমাদের চারপাশ ঠাণ্ডা হতে পারে, গরম হতে পারে কিন্তু মানবদেহ ঠিকই স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা ৩৭০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকার চেষ্টা করে। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে আগুনে ঝাঁপ দিলে কিংবা ০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও দেহ নিজেকে সামলে নিতে পারবে। এতটা সমলে নেয়ার ক্ষমতা নেই বলেই কখনো শীতবস্ত্র আবার কখনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র প্রয়োজন হয়।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি ব্যবস্থার কথা বলা যায়:
ঘাম নি:সরণ
মানবদেহকে ঠাণ্ডা করার একটি উপায় হল ঘাম নি:সরণ। প্রচণ্ড গরমে ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম নি:সৃত হয়। বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে এসে এই ঘাম বাষ্পীভূত হয় আর বাষ্পীভূত হতে প্রয়োজন হয় সুপ্ত তাপ বা লীন তাপ। এই তাপটা আসে শরীর থেকে, যার ফলে শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে।
অবশ্য ঘামের কিছু অসুবিধাও আছে। ঘামের সাথে শুধু পানি নয় সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড আয়নও বেরিয়ে যায়। সোডিয়াম বা ক্লোরাইড আয়নের ঘাটতি হলে দেহকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরমের দিনে ঘাম হলে বেশি পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া ছাড়াও প্রয়োজনে স্যালাইন পান করতে হয়।
রক্তনালীর প্রসারণ ও সংকোচন
শরীর থেকে তাপ বের দেয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে রক্তনালীর প্রসারণ। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে চামড়ার একেবারে নিচে ছড়িয়ে থাকা সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহ বাড়ে আর অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহের ফলে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে তাপ বেরিয়ে যেতে পারে।
শীতের সময় ঘটে উল্টো ঘটনা। তখন এই সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে চামড়ার নিচে রক্তপ্রবাহ কমে আসে, শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার হারও কমে আসে।
কাঁপুনি ও পেশীর সংকোচন
প্রচণ্ড শীতে কাঁপুনি আর পেশীর সংকোচনের ফলে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আসে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। যার এর ফলে অতিরিক্ত উত্তাপও তৈরি হয় যা প্রচণ্ড শীতে কিছুটা স্বস্তি দেয়।
লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া
প্রচণ্ড শীতে পেশী সংকুচিত হয়ে লোমের গোড়াকে চামড়ার দিকে টেনে ধরে, যার ফলে লোম খাড়া হয়ে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে শরীরের লোম তুলনামুলকভাবে বেশি বাতাস ধরে রাখতে পারে। বাতাস তাপ পরিবহনে বাধা দেয়। কাজেই লোম দাঁড়িয়ে যাওয়াটাও স্বস্তি দেয় শীতে। গরমে আবার উল্টো ঘটনা ঘটে। পেশী শিথিল হয়ে আসে, লোমের গোড়ায় পেশীর টান থাকে না, লোমও দাঁড়িয়ে থাকে না। কাজেই লোমের কারণে খুব বেশি বাতাস শরীরের সাথে আটকে থাকে না, তাপ পরিবহনে বাধা কমে আসে এবং গরমে স্বস্তি পাওয়া যায়।
দেহের তাপমাত্রা যেভাবে বুঝতে পারে মস্তিষ্ক
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য চামড়ায় থাকা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্ক পরিবেশের তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারনা নেয়। এছাড়া মস্তিষ্কে প্রবাহিত রক্তের তাপমাত্রার ওপরও নজর রাখে মস্তিষ্ক।