পর্বতের বিশালতা দেখে আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে এগুলো কখনো বদলায় না, চিরকাল একই অবস্থায় থাকে। আসলে তা নয়। এগুলোর উচ্চতা যেমন বাড়তে পারে, তেমন আবার পর্বত ক্ষয়ে পাহাড়ে, এমনকি সমভূমিতেও পরিণত হতে পারে। হিমবাহের বরফ পর্বতের পাথরে ভাঙন ধরাতে পারে, আবার মাটি ও পাথরের কণা ধীরে ধীরে বৃষ্টির পানির সাথে ক্ষয়ে যেতে পারে।
পর্বত সৃষ্টি
আজকের হিমালয়, আল্পস কিংবা রকি পর্বতমালা কোনটিই পৃথিবী সৃষ্টির সময় ছিল না। পরবর্তী সময়ে এগুলো তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে তরল অংশের উপরিভাগে যে শক্ত স্তর বা শেল রয়েছে তা হচ্ছে ক্রাস্ট (crust)। মহাদেশ, মহাসাগর সবই এর ওপর অবস্থান করে। একসময় পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভূখণ্ড একত্রিত অবস্থায় ছিল। বলা যায় একটি অতি-মহাদেশে বা supercontinent ছিল তখন। আর সেটিকে ঘিরে ছিল বৈশ্বিক মহাসাগর প্যান্থালাসা (Panthalassa)।
কিন্তু পৃথিবী অভ্যন্তরভাগ তরল ও গতিশীল হওয়ায় সুপারকন্টিনেন্ট স্থায়ী হতে পারেনি। ২০০ মিলিয়ন বছর আগে কয়েকটি ভাগে ভাগ হতে শুরু করে। এগুলোকে বলা হয় প্লেট। মহাদেশে আর মহাসাগরগুলো এসব প্লেটের ওপর অবস্থিত। এখান থেকেই কন্টিনেন্টাল আর ওশেনিক প্লেটের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন উত্তর আমেরিকা মহাদেশ যে প্লেটের ওপর রয়েছে সেটিকে বলা হয় নর্থ আমেরিকান প্লেট।
প্লেটগুলো এখনো গতিশীল। সবচেয়ে দ্রুত চলমান প্লেটটি বছরে প্রায় চার ইঞ্চি সরে যাচ্ছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে প্লেটগুলোর এই গতি পর্বতমালা সৃষ্টির একটি কারণ।
প্লেটগুলো একে অপরের দিকে অগ্রসর হলে মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি প্লেটের ওপর আরেকটি প্লেট উঠে যাওয়ার মত পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয় পর্বতমালা। হিমালয় পর্বতমালা এভাবেই তৈরি হয়েছে। ২৫ মিলিয়ন বছর আগে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হতে শুরু করে।
দু’টো প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে সেখানে মহাসাগর তৈরি হয়। আবার দু’টো প্লেটের সংঘর্ষের ফলে দুর্বল অংশে ফাটল তৈরি হয়ে সেখান থেকে লাভা বেরিয়ে আসা শুরু হতে পারে। এর ফলে আগ্নেয়গিরি এবং আগ্নেয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়। উঁচু মালভূমিতে পানির প্রবাহ গভীর খাদ সৃষ্টির মাধ্যমে নদী অববাহিকার দু’পাশে পর্বত সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় দু’টো প্লেট পাশাপাশি চলতে থাকে। এধরনের সংঘর্ষের ফলে সাধারণত ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
জলবায়ুর ওপর প্রভাব
পর্বত এবং পর্বতমালা একটি অঞ্চলের জলবায়ু বদলে দিতে পারে। যেমন হিমালয় পর্বতমালা শীতকালে উত্তর দিক থেকে শীতল বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশে বাধা দেয়ার ফলে এ অঞ্চলে শীতের প্রকোপ কম। আবার বর্ষাকালে হিমালয় পর্বতমালা জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ু আটকে হিমালয়ের দক্ষিণ অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। অথচ হিমালয়ের উত্তরে তিব্বত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। হিমালয়ের বৃষ্টিপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনাসহ ১৯টি প্রধান নদীতে পানির যোগান দেয়।