প্রতি চার বছরে একবার ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে ধরা হয় যেটি লিপ ইয়ার নামে পরিচিত আর দিনটিকে বলা হয় লিপ ডে।
হিজরি ক্যালেন্ডারের মত চান্দ্রবর্ষ অনুসরণ করে চলা ক্যালেন্ডার প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে না। যে কারণে কখনো গ্রীষ্মে আর কখনো শীতে ঈদ উৎসব পালন করতে হয়। কিন্তু সৌরবছরের ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। এর কারণ সৌরবছর সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলে।
প্রচলিত যে খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার আমরা ব্যবহার করি তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। (পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির সময় প্রবর্তিত)
প্রায়ই বলা হয় সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন সময় লাগে। ফলে বছর ৩৬৫ দিনে ধরা হলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আজকের দিনটি যদি গ্রীষ্মের কোন দিন হয়ে থাকে তবে হাজার বছর পরও তাই থাকার কথা। অন্যভাষায় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এবং সিজনাল ইয়ারে কোন হেরফের হবে না।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টার মত সময় লেগে যায়। তাই দেখা যায় ক্যালেন্ডার প্রতি চার বছরে একদিন পিছিয়ে পড়ছে। আর ১০০ বছরে ২৫ দিন পিছিয় পড়ে। ফলে ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরা হলে দেখা যাবে ১০০ বছর পর শরৎ, শীত, বসন্ত বা গ্রীষ্ম সব ঋতুর শুরুই দেরিতে হচ্ছে।
সমাধানে এগিয়ে এলেন জুলিয়াস সিজার
জুলিয়াস সিজারের আমলে লিপ ইয়ার প্রথা নিয়ে আসা হয়। প্রতি চার বছরে একদিন যোগ করে লিপ ইয়ার প্রথা চালু করে এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল তখন।
সমস্যা আরও ছিল
সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ঠিক ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে না। সূক্ষ্ম হিসেবে এটি ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড। কাজেই জুলিয়াস সিজারের চালু করা ক্যালেন্ডার কিছুটা হলেও দ্রুত এগুচ্ছিল। প্রায় দেড় হাজার বছরে এটি প্রায় ১০ দিন এগিয়ে গিয়েছিল। মার্চের ২১ তারিখকে উত্তর গোলার্ধে বসন্তের শুরু বলা হয়। তারিখটিতে দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।
কিন্তু জুলিয়াস সিজারের আমলে চালু করা ক্যালেন্ডার দেড় হাজার বছরে ১০ দিনের মত এগিয়ে যাওয়ায় মার্চের ১১ তারিখেই বসন্ত শুরু হয়ে যাচ্ছিল। তখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১০০ বছর পর পর লিপ ইয়ার না ধরার সিদ্ধান্ত হয়। সাথে ক্যালেন্ডারটিকে আরও সূক্ষ্ম করতে ৪০০ বছর পর পর লিপ ইয়ার ধরারও সিদ্ধান্ত হয়। আর ক্যালেন্ডারটিকেও ১১ দিন এগিয়ে নেয়া হয়েছিল তখন। তবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার পৃথিবীর সব জায়গায় একসাথে চালু হয়নি। ফলে বহুবছর দিন তারিখ নিয়ে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। যেখানেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করা হয়েছে সেখানেই অধিবাসীরা আবিষ্কার করেছেন হঠাৎ ১১ দিন উধাও হয়ে গেছে।
এক কথায় লিপ ইয়ার সংক্রান্ত নিয়ম:
- কোন বছর ৪ দ্বারা বিভাজ্য হলে সেটি লিপ ইয়ার হবে। যেমন ২০১৬ ছিল লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।
- কোন বছর ১০০ দ্বারা বিভাজ্য হলে সেটি লিপ ইয়ার হবে না। যেমন ১৯০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল না।
- কোন বছর ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হলে সেটি লিপ ইয়ার হবে। যেমন ২০০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল।
কিন্তু এরপরও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না। ৩০০০ বছরে এতে অতিরিক্ত একদিন যোগ হয়ে যাবে।
বাংলা ক্যালেন্ডার
প্রতি চার বছর পর পর চৈত্র মাস ৩০ দিনের পরিবর্তে ৩১ দিন ধরা হয়।
লিপ ইয়ার নিয়ে অদ্ভুত রীতি:
লিপ ইয়ার সংক্রান্ত কিছু অদ্ভুত রীতিও রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আয়ারল্যান্ডের রীতি হচ্ছে সেখানকার নারীরা কেবল লিপ ডে বা ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে পুরুষদের বিয়ের প্রস্তাব করতে পারেন আর সেদিন না বলা যাবে না। এদিকে গ্রিসে লিপ ডে-তে বিয়ে করাকে অশুভ মনে করা হয়।