প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এলপি গ্যাসের মধ্যে মৌলিক একটি পার্থক্য রয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন কিন্তু এলপি গ্যাসের প্রধান উপাদান প্রোপেন অথবা বিউটেন। আবার অনেক সময় প্রোপেন এবং বিউটেনের মিশ্রণও এলপি গ্যাস হিসেবে সরবরাহ করা হয়। লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসকে সংক্ষেপে এলপিজি বা এলপি গ্যাস বলা হয়।
খনি থেকে পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পুরোপুরি বিশুদ্ধ থাকে না সেটি পরিশোধনের মাধ্যমে সরবরাহের উপযোগী করা হয়। আবার তেলের খনিতেও তেল পরিশোধন করতে হয়। এই পরিশোধন প্রক্রিয়ায় উপজাত (byproduct) হিসেবে এলপি গ্যাস পাওয়া যায়।
খনি থেকে পাওয়া গ্যাস বা অপরিশোধিত তেল বেশ দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। প্রায় ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই পরিশোধন কাজ চলে। সবচেয়ে ভারী পদার্থ হিসেবে সবার নিচে থাকে বিটুমিন এরপর যথাক্রমে ভারী জ্বালানি তেল বা বাংকার ফুয়েল, ডিজেল, কেরোসিন ন্যাপথা, পেট্রোল এবং আর্দ্র গ্যাস (wet gas) পাওয়া যায়। একেবারে ওপরে জমা হওয়া এই আর্দ্র গ্যাস থেকেই এলপি গ্যাস পাওয়া যায়। এই এলপি গ্যাস উচ্চচাপে তরল অবস্থায় সিলিন্ডারে ভরে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে যে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় তা পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় কিংবা এলএনজি-তে রূপান্তরিত করে সরবরাহ করা হয়।
রান্না ছাড়াও বিভিন্ন দেশে শিল্পকারখানা এবং যানবাহনে এলপি গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রে হট এয়ার বেলুনেও এলপি গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
এলপি গ্যাসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য:
- এটি বাতাসের চেয়ে ভারী। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা।
- এলপি গ্যাসের জ্বালানি ঘনত্ব বেশি। অর্থাৎ সমপরিমাণ এলপি গ্যাস এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে এলপি গ্যাস থেকে বেশি উত্তাপ পাওয়া যায়। এলপি গ্যাসের এনার্জি কনটেন্ট: 2MJ/m3 এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের এনার্জি কনটেন্ট: 38.7MJ/m3 ।
এলপি গ্যাসের দহন বিক্রিয়া
এলপি গ্যাসের দহনের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের দহনের চেয়ে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
পর্যাপ্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এলপি গ্যাসের (প্রোপেন) দহন বিক্রিয়া:
C3H8 + 5 O2 → 3 CO2 + 4 H2O + Heat
প্রোপেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই অক্সাইড + পানি + তাপ
পর্যাপ্ত মাত্রায় অক্সিজেন না থাকলে দহন পুরোপুরি সম্পন্ন হতে পারে না, কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়:
2 C3H8 + 9 O2 → 4 CO2 + 2 CO + 8 H2O + heat
প্রোপেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই অক্সাইড + কার্বন মনোক্সাইড + পানি + তাপ
বিউটেনের (n-butane) ক্ষেত্রে
2 C4H10 + 13 O2 → 8 CO2+ 10 H2O + Heat
বিউটেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই অক্সাইড + পানি + তাপ
এক্ষেত্রেও অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়:
2 C4H10 + 9 O2 → 8 CO + 10 H2O + Heat
বিউটেন + অক্সিজেন → কার্বন মনোক্সাইড + পানি + তাপ