চাঁদের তাপমাত্রার বিষয়টি বেশ গোলমেলে, এক কথায় এর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কোথাও হিমশীতল পরিবেশ আবার কোথাও প্রচণ্ড উত্তাপ। চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। ফলে বাইরে থেকে (সূর্যের আলো) সুরক্ষা কিংবা চাঁদের পৃষ্ঠের তাপ আটকে রাখা কোনটিই সম্ভব হয় না। চাঁদ কেবল পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করে না। নিজ অক্ষের ওপরও আবর্তন করে। ২৭ দিনে নিজ অক্ষের ওপর চাঁদের একটি আবর্তন সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর সাড়ে ১৩ দিন চাঁদের একটি দিন বা রাতের সমান। এত দীর্ঘ সময় সূর্যের আলো পেয়ে চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২৫৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়। অন্যদিকে টানা অন্ধকারে চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে যায়। অন্ধকারে চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-১৫৩০ সে.) বা -২৪৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়।
চাঁদে ঋতু পরিবর্তন নেই
পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর ২৩.৪৪ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে আর চাঁদ মাত্র ১.৫৪ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। ফলে চাঁদে পৃথিবীর মত ঋতু পরিবর্তন হয় না। তবে এই বেঁকে থাকার কারণে চাঁদে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে কখনোও সূর্যের আলো পৌঁছায় না। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর খাদে পাওয়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হচ্ছে -২৩৮০ সে. বা -৩৯৬০ ফা. আর উত্তর মেরুর খাদে পাওয়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -২৪৭০ সে. বা -৪১৩০ ফা.। সৌরজগতে এতটা শীতল জায়গা খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। এসব অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্তগুলোতে পানি থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষ স্পেসস্যুট
চাঁদের এই বিরূপ আবহাওয়ার জন্যই নভোচারীদের পোশাক বা স্পেসস্যুট বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়েছিল। এসব স্পেসস্যুটে তাপকুপরিবাহী পদার্থের কয়েকটি স্তর রাখা হয়েছিল আর স্পেসস্যুটের বাইরের পৃষ্ঠ তৈরি হয়েছিল প্রতিফলক পদার্থ দিয়ে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় টিকে থাকতে হিটার এবং গরমে টিকে থাকতে কুলার বা শীতলীকারক যন্ত্রও স্পেসস্যুটের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
অভ্যন্তরের অবস্থা
লৌহসমৃদ্ধ চাঁদের অভ্যন্তরভাগের ব্যাসার্ধ ৩৩০ কিলোমিটারের মত। এখানকার তাপমাত্রা ১,৩২৭০ সে. থেকে ১,৪২৭০ সে. এর মত। এটি এর ওপরের স্তরকে তরল রাখতে সাহায্য করে। তবে চাঁদের বাইরের পৃষ্ঠের ওপর এই উত্তাপের কোন প্রভাব অনুভূত হয় না।