চাঁদের বুকে বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। এখানে গেলে শ্বাস নেয়ার বায়ুও পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হয়। পতাকা গাঁথলে সে পতাকাও বাতাসের অভাবে স্থির হয়ে থাকে। অবশ্য চাঁদে বায়ুমণ্ডল যে একদম নেই তা নয়। অত্যন্ত পাতলা যে বায়ুমণ্ডল রয়েছে তাকে বলা হয় এক্সোস্ফিয়ার। এক্সোস্ফিয়ারে গ্যাস অণুর সংখ্যা খুব কম থাকায় এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় না বললেই চলে। এসব অণু কামানের গোলার মত বাঁকানো পথে চলার পর চাঁদের বুকে আঘাত করে। যেখানে পৃথিবীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১০০ বিলিয়ন বিলিয়ন অণু থাকে সেখানে চাঁদে প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১০০ টির মত অণু থাকে আর চাঁদের পুরো বায়ুমণ্ডলের ভর ২৫,০০০ কেজির মত। অ্যাপোলো নভোচারীরা সেখানে আর্গন-৪০, হিলিয়াম-৪, অক্সিজেন, মিথেন, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড, এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। এদিকে পৃথিবী থেকে বর্ণালী বীক্ষণের মাধ্যমে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম পাওয়া গেছে। আর কক্ষপথে মহাকাশযান পাঠিয়ে রেডন এবং প্লুটোনিয়াম পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে হিলিয়ামও পাওয়া গেছে।
চাঁদে বায়ুমণ্ডলের অন্যতম উৎস চাঁদের অভ্যন্তরভাগ। ভূমিকম্প এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস বেরিয়ে আসে। হালকা গ্যাসীয় কণাগুলো প্রায় সাথে সাথেই মহাকাশে হারিয়ে যায়। আর চাঁদের অভ্যন্তরভাগ থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাস এ ঘাটতি পূরণ করতে থাকে।
সূর্যের আলো, সৌরঝড় এবং মহাকাশ থেকে আশা ক্ষুদ্র কণিকা বা মাইক্রোমিটিওরাইট চাঁদের মাটিতে আঘাত হানার ফলেও বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় কণা নিঃসৃত হয়। এর একটি অংশ মহাকাশে মিলিয়ে যায় আর বাকি অংশ চাঁদের পাতলা বায়ুমণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ারে থেকে যায়।
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নির আঘাতে এসব গ্যাসীয় কণা থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে যার ফলশ্রুতিতে গ্যাস অণুগুলো আয়নিত হয়ে পড়ে। চার্জিত এসব কণা চাঁদের আকাশে ১ মাইলের বেশি ওপরে উঠে যেতে পারে। রাতের বেলা ঘটে বিপরীত ঘটনা। সূর্যের আলোর অনুপস্থিতিতে এসব চার্জিত কণা সৌর ঝড় থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিচের দিকে নেমে আসে। দিনে ও রাতে এই প্রবাহ চলতে থাকে। যা অনেকটা পৃথিবীর সূর্যাস্তের মত আভা তৈরি করে। একে বলা হয় লুনার হরাইজন গ্লো। এপোলো মিশনের নভোচারীরা বেশ কয়েকবার এ দৃশ্য দেখেছেন।