বজ্রপাতের সময় বাড়ির ভেতরে থাকলে যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন
অনেক সময় বাড়ির জানালায় বজ্রবিদ্যুৎ আঘাত হানে তাই জানালা বন্ধ রাখুন এবং জানালা থেকে দূরে থাকুন। খোলা বারান্দা বা ব্যালকনিতে থাকা বিপদজনক। ঝড়ের সময় ঘরের মেঝেতে শোবেন না, দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না।
পানির পাইপ, কল, সিঁড়ির রেলিং ইত্যাদি ছোঁবেন না
আজকাল পানির লাইনের জন্য পিভিসি পাইপ ব্যবহার করা হলেও লোহার পাইপের ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। কাজেই বাড়ির পানির লাইনে বজ্রবিদ্যুৎ আঘাত হানলে পানির কল ব্যবহার করতে গিয়েও তড়িতাহত হওয়ার আশংকা থাকে। এসময় ধাতব কল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এমনকি বাথটাব বা শাওয়ারের পানিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অতএব বজ্রঝড়ের সময় পাকাবাড়ির ভেতরও গোসল থেকে বিরত থাকুন।
ল্যান্ড টেলিফোন ছোঁবেন না
টেলিফোন লাইনে বাজ পরলে ল্যান্ড টেলিফোন ব্যবহারকারীও আহত হতে পারেন। কাজেই ল্যান্ড টেলিফোন ব্যবহার না করে বিশেষ প্রয়োজন হলে কর্ডলেস ফোন কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করুন।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকেও দূরে থাকুন
টিভি, ফ্রিজের মত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও বিপদজনক হতে পারে। এসব স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে এসব যন্ত্রপাতি অফ রাখুন। সুইচ অফ করাই যথেষ্ট নয়। প্লাগও খুলে ফেলতে হবে।
বাড়িতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকলে
বাড়িতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন।
আহত ব্যক্তির চিকিৎসা
আহত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তি কোন চার্জ বা বিদ্যুৎ ধারণ করেন না। তাকে ছোঁয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ (যদি না তিনি বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে থাকেন)। বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তির মত করেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। আহত ব্যক্তির হৃদপিণ্ড কাজ করছে কিনা, শ্বাস নিতে পারছেন কিনা দেখতে হবে। ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ড কাজ না করলে প্রাথমিক ব্যবস্থার (CPR) মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। (প্রশিক্ষণ ছাড়া CPR হিতে বিপরীত হতে পারে।)
বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ
বিদ্যুতের প্রভাবে ত্বক শিরশির করা, চুল খাড়া হয়ে যাওয়া, ধাতব পদার্থ কাঁপতে থাকা ইত্যাদি বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ। অনেকে ‘কি’ ‘কি’ শব্দ পাওয়ার কথাও বলেন। এ অবস্থায় নিচু হয়ে বসে বজ্রপাতের প্রচণ্ড শব্দ থেকে কান রক্ষার জন্য আঙুল দিয়ে কান বন্ধ রাখতে হবে।
সর্বশেষ বজ্রপাতের শব্দ শোনার অন্তত ৩০ মিনিট পর নিরাপদ আশ্রয় থেকে বের হোন।
আগাম প্রস্তুতি
যথাযথ মানের বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করুন। সঠিক বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার না করলে উল্টো ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
তালগাছের মত উঁচু গাছে বজ্রবিদ্যুৎ আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব গাছ বেশি সংখ্যায় লাগালে বজ্রপাতে হতাহতের ঝুঁকি অনেক কমে আসে।
বজ্রপাত সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য
- একই জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ বারবার আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে বছরে গড়ে ২৫ বার বজ্রবিদ্যুৎ আঘাত হানে। একবার বজ্রঝড়ের সময় ২৪ মিনিটের মধ্যে ৮ বার আঘাত হেনেছিল।
- পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বার বজ্রপাত হয়।
- যে তড়িৎক্ষরণের ফলে বজ্রপাত হয় তাতে ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট এবং ৩০,০০০ অ্যাম্পিয়ার মাত্রার বিদ্যুৎ থাকতে পারে। এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ১০০ ওয়াটের একটি বাল্বকে তিন মাস জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব আর ফ্লোরোসেন্ট বাতি হলে তা এক বছর পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব।
- বজ্রপাতের ফলে যে তড়িৎক্ষরণ হয় তাতে তাপমাত্রা ৫০,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে যা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ৫ গুণ।
সূত্র:
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর,
- অ্যাকু ওয়েদার,
- ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস সোসাইটি।