সূর্যগ্রহণ কি?
পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে চাঁদ এসে হাজির হলে পৃথিবীতে চাঁদের ছায়া পড়ে এটিই সূর্যগ্রহণ। পৃথিবী যে কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করছে সেটি এবং চাঁদ যে কক্ষপথে পৃথিবীকে আবর্তন করছে সেটি এক সমতলে হলে প্রতি মাসেই একবার করে সূর্যগ্রহণ হত। কিন্তু কক্ষপথ দু’টি এক সমতলে নয়, কিছুটা হেলানো, তাই সূর্যগ্রহণ একটি বিরল ঘটনা। বছরে কমপক্ষে দু’টি সূর্যগ্রহণ হলেও কোন নির্দিষ্ট স্থানে কয়েকবছর পরপর অন্তত একটি আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যায়।
এছাড়া চাঁদ আকারে ছোট এবং সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অনেক কাছে হওয়ায় যেকোনো সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর খুব অল্প এলাকা থেকে দেখা যায়। কিছু এলাকায় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের পরিবর্তে আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যায়।
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা বিপদজনক
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা অত্যন্ত বিপদজনক, এতে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে। সূর্যের photosphere বা আলোকমণ্ডল থেকে আসা উজ্জ্বল আলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে চোখের স্থায়ী ক্ষতি করে দিতে পারে। যে যাই বলুক না কেন সূর্যগ্রহণ দেখার সময় চোখের সুরক্ষার জন্য সানগ্লাস যথেষ্ট নয়। বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের মাধ্যমে কখনোই সরাসরি সূর্য দেখা যাবে না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশেষ সোলার টেলিস্কোপ বা ফিল্টার ব্যবহার করে সরাসরি সূর্য গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেন।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হলে যখন চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয় কেবল তখনই কিছুটা নিরাপদ হতে পারে। কিন্তু যেকোনো সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর খুব অল্প এলাকা থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায়।
নিরাপদে সূর্যগ্রহণ দেখা
উপযুক্ত ফিল্টার কিংবা অভিক্ষেপ পদ্ধতি (projection method)ব্যবহার করে সূর্যগ্রহণ দেখতে হয়।
সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ চশমা রয়েছে যেটি দেখতে অনেকটা সিনেমা হলে থ্রিডি সিনেমা দেখার চশমার মত। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য তৈরি চশমা সূর্যের আলোর তীব্রতা এক লক্ষ ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনেতে পারে। দেখতে কালো যেকোনো কিছুকেই ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এগুলো দৃশ্যমান আলোর তীব্রতা কমিয়ে আনলেও ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোর তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য তৈরি ফিল্টার ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে সেটিতে কোন ছিদ্র আছে কিনা।
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি
রান্নাঘরে খাদ্যদ্রব্য পরিষ্কার করার জন্য চালনির মত যেসব পাত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো সূর্যের দিকে বসিয়ে কাগজের ওপর ছায়া ফেলার মাধ্যমে সূর্যের অসংখ্য প্রতিচ্ছবি তৈরি করার মাধ্যমে সূর্যগ্রহণ দেখা যেতে পারে। আবার কার্ড-বোর্ডে পিনের মাধ্যমে ছিদ্র করেও সূর্যের আলোর অভিক্ষেপ তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ছিদ্রের মাধ্যমে সূর্যের দিকে তাকানো যাবে না।
আয়না ব্যবহার করেও সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এজন্য মেকআপের আয়নার মত ছোট আয়নাই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই সমতল আয়না হতে হবে। আয়নার সামনের অংশ কাগজে ঢেকে নিতে হবে। কাগজে আগে থেকেই ৩ থেকে ৫ মিলিমিটার ব্যাসের ছিদ্র করে নিতে হবে। এরপর আয়নার মাধ্যমে অন্ধকার ঘরের দেয়ালে অভিক্ষেপ সৃষ্টি করতে হবে। আয়না এবং দেয়ালের দূরত্ব ৫ মিটার হলে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। কোন অবস্থাতেই সরাসরি আয়নায় তাকিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না, এটি সরাসরি সূর্যের দিকে তাকানোর মতই বিপদজনক।
বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ ব্যবহার
বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের মাধ্যমে অভিক্ষেপ (Projection )তৈরি করেও সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। কোন অবস্থাতেই সাধারণ বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকানো যাবে না।
এক্ষেত্রে কার্ড-বোর্ড এবং বাইনোকুলার ট্রাইপডের ওপর রাখলে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। বাইনোকুলারের একটি আইপিস লেন্স ক্যাপ দিয়ে ঢেকে অন্যটির মাধ্যমে অভিক্ষেপ তৈরি করতে হবে। ফোকাস হুইলের মাধ্যমে কার্ডবোর্ডের ওপরে থাকা প্রতিবিম্বটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
একইভাবে টেলিস্কোপের মাধ্যমেও প্রতিবিম্ব তৈরি করা যায়। তবে সূর্যের আলো যাতে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের ভেতর ঘনীভূত হয়ে যাতে আইপিস-কে উত্তপ্ত করে না তোলে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্লাস্টিকের বদলে পুরনো ধাতব আইপিস ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফিল্টার বা মোবাইল ফোন ক্যামেরা
মানসম্মত সোলার ফিল্টার টেলিস্কোপের সাথে লাগিয়ে নিতে পারলে সূর্যগ্রহণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়। আরেকটি বিকল্প হচ্ছে সূর্যের দিকে না তাকিয়ে সাধারণ মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলে নেয়া।