আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো এবং বজ্রপাতের কারণের দিকে তাকালে দেখা যায় বিমানে বজ্রপাত কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। যাত্রীবাহী বিশাল বিমানগুলোকে মেঘমালার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। মেঘের দু’টি অংশের মধ্যে বৈদ্যুতিক বিভব পার্থক্যের মাত্রা বেড়ে গেলে বজ্রপাত হয় আর এ সময় দু’টি মেঘের মাঝখানে কোন বিমান থাকলে সেটিতে বজ্র বিদ্যুৎ আঘাত হানতে পারে। অনেক সময় বিমানের উপস্থিতিই বজ্রপাতের কারণে হয়ে ওঠে।
১৯৬৩ সালে বজ্রপাতের কারণে প্যান আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭০৭ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৮১ জন মারা যায়। একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে বিমানটির জ্বালানি ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
তবে বজ্রপাতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। প্রতিটি বিমানই আকাশে ওড়ার সময় বছরে গড়ে একাধিকবার বজ্রপাতের শিকার হয় কিন্তু বিমানের কিছুই হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাত্রীরা বুঝতেও পারেন না তাদের বিমানটি বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়েছে।
আধুনিককালের বিমানে ডজন-খানেক কম্পিউটার, রাডারসহ নানা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থাকে। অনেক যাত্রী আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকেন। তাই যাত্রীদের এবং বিমানের সব যন্ত্রাংশ নিরাপদ রাখতে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেয়া জরুরি।
বিমানের বাইরের কাঠামো এমনিতেই অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি হয়। অ্যালুমিনিয়াম বেশ ভালো মানের বিদ্যুৎ পরিবাহী। বিমানের কাঠামো তৈরির সময় লক্ষ্য রাখা হয় যাতে অ্যালুমিনিয়ামের প্রতিটি অংশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে এবং বজ্রপাতের উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। ফলে বজ্রপাতের উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ সহজেই বিমানের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশের পর অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যায়। বিমানের জ্বালানি ট্যাংককে পুরু ধাতু দিয়ে আবৃত রাখা হয়। যাত্রীরা বড়জোর একটি শব্দ শুনতে পায় বা জানালায় আলো খেলে যাওয়া দেখতে পায়।
ইদানীংকালের ফাইবার গ্লাসে তৈরি বিমানগুলো বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এধরনের ছোট বিমানকে বজ্রপাতের ঝুঁকি আছে এমন মেঘ এড়িয়ে চলতে হয়। তবে ফাইবার গ্লাসে তৈরি বড় বিমানগুলোর বাইরের কাঠামোয় অ্যালুমিনিয়াম বা তামার তৈরি জালিকা বা মেশ বসিয়ে দেয়া হয় ফলে বিমানের বাইরের কাঠামোটি বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে ওঠে।
বজ্রপাতের উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ বিমানের বাইরের কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানের ভেতরের অংশে যন্ত্রপাতিতে আবেশ প্রক্রিয়ায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে যাকে সার্জ বলা হয়। এ থেকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়।
এসব ব্যবস্থা নেয়ার পরও যাত্রীবাহী বিমান মাঝেমাঝে বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সালের মত বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি।