ওজোন গ্যাস কী?

শিহাব উদ্দিন আহমেদ | জানুয়ারী ২, ২০১৯
ozone photo

কিছু কিছু মৌলিক পদার্থ আছে যেগুলো কেবলমাত্র ভিন্ন আণবিক গঠনের মাধ্যমে ভিন্ন ধরনের পদার্থের অণু সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। যেমন হীরা ও গ্রাফাইট উভয়ই কার্বন হলেও কেবল আণবিক গঠনে ভিন্নতার কারণে এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে অনেক অমিল দেখা যায়। গ্রাফাইট বিদ্যুৎ পরিবাহী হলেও হীরা বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। এছাড়া হীরা গ্রাফাইটের তুলনায় অনেক শক্ত। একে বলা হয় বহুরূপীতা।

বহুরূপীতার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে অক্সিজেন পরমাণু। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বলতে আমরা আসলে দ্বিপরমাণুক অক্সিজেনের (O2) কথা বলি। অর্থাৎ এসব অক্সিজেন অণুতে দু’টি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। কিন্তু তিনটি অক্সিজেন পরমাণু নিয়েও অণু গঠিত হতে পারে যা ওজোন (O3) নামে পরিচিত। অনেকসময় এদের ট্রাই অক্সিজেনও বলা হয়। ওজোন অণু দ্বিপরমাণুক অক্সিজেনের চেয়ে কিছুটা কম স্থিতিশীল।

সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে ওজোন একটি গ্যাস, আপেক্ষিক গুরুত্ব প্রায় 2.144; যা অক্সিজেনের চেয়ে 1.5 গুণ ভারী। -112° C ( -170° F) তাপমাত্রায় এটি তরলে রূপান্তরিত হয়। এসময় এটি গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। আর এটি ঘনীভূত হয় -251.4° C ( -420° F) তাপমাত্রায়।

ওজোন অণু দ্বিপরমাণুক অক্সিজেনের মত স্থিতিশীল নয়। সাধারণ তাপমাত্রায় প্রভাবকের উপস্থিতিতে কিংবা 100° C ( 212° F) তাপমাত্রার ওপরে ওজোন অণু ভেঙে দ্বিপরমাণুক অক্সিজেন তৈরি হয়। অক্সিজেনের সাথে বিভিন্ন দিকে মিল থাকলেও ওজোন অক্সিজেনের চেয়ে বেশি সক্রিয় এবং শক্তিশালী জারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন অ্যলকিনকে অ্যালডিহাইড, কিটোন বা কার্বোক্সালিক এসিডে পরিণত করার ক্ষেত্রে ওজোন ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জৈব পদার্থের বিরঞ্জক হিসেবে এবং পানি বিশুদ্ধিকরণে জীবাণুনাশক হিসেবে ওজোন ব্যবহৃত হয়।

ভূপৃষ্ঠে ওজোন সৃষ্টি

তড়িৎক্ষরণ বা বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ কিংবা অতিবেগুনী রশ্মির কারণে সাধারণ দ্বি-পরমাণুক অক্সিজেন থেকে ওজোন তৈরি হতে পারে। বায়ুমণ্ডলে এমনিতেই ২১% অক্সিজেন রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তড়িৎক্ষরণ হলে ওজোন গ্যাস তৈরি হয়। তাই অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কাছাকাছি এলাকায় স্ফুলিঙ্গ থেকে সৃষ্ট ওজোন গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। বজ্রসহ বৃষ্টির পরও ওজোন গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়।

O2 এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2 )এর মিশ্রণ থেকে উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতিতে ওজোন তৈরি হতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গাড়ির ইঞ্জিন থেকে NO2 নির্গত হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় নাইট্রোজেন (N2) এবং অক্সিজেন(O2) বিক্রিয়া করে না। তাই বায়ুমণ্ডলে খুব বেশি NO2 থাকে না।

কিন্তু অন্তর্দাহ ইঞ্জিনের ভেতরে উচ্চতাপে নাইট্রোজেন (N2) এবং অক্সিজেন (O2) বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) তৈরি করে:

N2(g) + O2(g) → 2NO(g)

এই NO স্বতঃস্ফূর্তভাবে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে NO2 তৈরি করে:

2NO(g) + O2(g) → 2NO2(g)

নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড লালচে বাদামী গ্যাস, যা উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতিতে ভেঙে যায়:

NO2(g) → NO(g) + O(g)

এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অক্সিজেন পরমাণু অত্যন্ত সক্রিয়, এটি অক্সিজেন অণুর (O2)সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন (O3)তৈরি করে:

O(g) + O2(g) → O3(g)

ক্ষতিকর প্রভাব

গ্রীক  ‘ozon’ শব্দের অর্থ গন্ধ পাওয়া। বাস্তবেও ওজোন কড়া গন্ধযুক্ত হালকা নীল রঙের বিষাক্ত একটি গ্যাস। পৃথিবীপৃষ্ঠে ওজোন গ্যাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, এ্যাজমা ইত্যাদি হতে পারে। শাকসবজি, রাবার, প্লাস্টিক ইত্যাদিও ওজোনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যানবাহন এবং শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব গ্যাস থেকে ওজোন তৈরি হতে পারে। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরের বাতাসে উচ্চমাত্রায় ওজোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছিল। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

পৃথিবী পৃষ্ঠে ওজোন গ্যাসকে একটি দূষণ-সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে দেখা হলেও বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি এই ওজোন গ্যাসের স্তরই আটকে দেয়।

Print Friendly, PDF & Email
  • আরও পড়ুন:

  • প্রশ্ন ও উত্তর: