একসঙ্গে দু’টি বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্তানের জন্ম হলে তাদের যমজ সন্তান বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মাত্র ১.১% এর মত ক্ষেত্রে যমজ সন্তান জন্মের ঘটনা ঘটে আর টেস্টটিউব পদ্ধতির ক্ষেত্রে যমজ সন্তান জন্মের হার ৩৫% এর মত। বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে যমজ সন্তান জন্মের জন্য দায়ী।
ডিএনএ বিন্যাস
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যমজ সন্তানদের ডিএনএ বিন্যাস কি হুবহু একই রকম হয় নাকি আলাদা? মজার ব্যাপার হচ্ছে ডিএনএ বিন্যাস একই রকম হতে পারে, আবার আলাদাও হতে পারে। যমজ সন্তানদের সবাই ছেলে বা সবাই মেয়ে হবে এমন কোন কথা নেই। ছেলেমেয়ের মিশ্রণও থাকতে পারে। আবার এমনও হতে পারে কাগজে কলমে যমজ কারণ একই সাথে জন্মেছে কিন্তু বাস্তবে ভাই-বোনদের (sibling) মধ্যে যে ধরনের জিনগত সাদৃশ্য থাকে তার চেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। যমজ কি ধরনের হবে তা নির্ভর করে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিষিক্ত হওয়ার ধরনের ওপর। অন্তত আট ধরনের যমজের কথা বলা যায়।
ফ্র্যাটার্নাল টুইন (Fraternal twins)/ডাইজাইগোটিক/নন-আইডেন্টিক্যাল: ভাই-বোনদের (sibling) মধ্যে যে জিনগত সাদৃশ্য থাকে এদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি কিছু মিল থাকে না। এদের রক্তের গ্রুপ আলাদা হতে পারে, একজন ছেলে এবং আরেকজন মেয়ে হতে পারে। (আবার উভয়ই ছেলে বা উভয়ই মেয়ে হতে পারে।) দু’টো আলাদা ডিম্বাণু দু’টো আলাদা শুক্রাণু দ্বারা আলাদাভাবে নিষিক্ত হওয়ার মাধ্যমে এধরনের টুইনের জন্ম হয়।
মায়েদের যেসব বিষয় ফ্র্যাটার্নাল টুইন জন্মের সম্ভাবনা বাড়ায়:
- বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের ওষুধ গ্রহণ,
- ওজন ও উচ্চতা গড় ওজন ও উচ্চতার চেয়ে বেশি,
- পারিবারিক ইতিহাস,
- নিজেই ফ্রাটার্নাল টুইন,
- অতীতে গর্ভধারণের ইতিহাস,
- পশ্চিম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত,
- বয়স ৪০ এর বেশি।
আইডেন্টিক্যাল টুইন (Identical twins)/মনোজাইগোটিক/ম্যাটার্নাল: এধরনের যমজদের ক্ষেত্রে একই ধরনের জিনের উপস্থিতি দেখা যায়। একটি ডিম্বাণু ও একটি শুক্রাণু নিষিক্ত হওয়ার পর বিভাজনের মাধ্যমে আইডেন্টিক্যাল টুইনের জন্ম হয়। এদের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ জিনগত সাদৃশ্য থাকে। এরা হয় উভয়ই ছেলে হবে না হয় উভয়ই মেয়ে হবে। তবে উভয়ই ছেলে বা মেয়ে হওয়ার অর্থই আইডেন্টিক্যাল টুইন হওয়া নয়, ফ্র্যাটার্নাল টুইনও হতে পারে।
সংযুক্ত যমজ (conjoined twins): ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিষিক্ত হওয়ার ১৩ দিনের বেশি সময় পর বিভাজিত হলে আলাদা সন্তানের জন্ম হয় ঠিকই কিন্তু দেহের কোন অংশে জোড়া থেকে যায়।
মিরর ইমেজ টুইন (mirror image twins): এধরনের যমজদের মধ্যে আয়নার প্রতিবিম্বের মত বৈপরীত্য দেখা যায়। যেমন একজনের চুল হয়ত ঘড়ির কাঁটার দিকে কোঁকড়ানো আর অন্যজনের ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। কিংবা একজনের জন্মগত দাগ ডান কাঁধে আর অন্যজনের বাম কাঁধে। এধরনের যমজ কোন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় না, কেবল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হয়।
হাফ আইডেন্টিক্যাল টুইন (Half identical twins): এধরনের যমজদের জিনের অর্ধেক একই রকম থাকে আর অর্ধেক থাকে ভাই-বোনদের মত।
মিক্সড ক্রোমোজোম টুইন (Mixed Chromosome twins): দু’টো ডিম্বাণু দু’টো পৃথক শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর জোড়া লেগে গেলে মিক্সড ক্রোমোজোম টুইনের জন্ম হয়। এদের অনেকের ক্ষেত্রে একের অধিক প্রকৃতির লোহিত কণিকা পাওয়া যায়, অনেকের ক্ষেত্রে XX এবং XY উভয় ক্রোমোজোমের উপস্থিতি দেখা যায়। এধরনের ঘটনা খুবই বিরল।
সুপারফিটেশন (Superfecundation): একটি ভ্রূণ সৃষ্টি এবং বিকাশের পর্যায়ে আরেকটির সৃষ্টিকে সুপারফিটেশন বলা হয়।
সুপারফিকান্ডেশেন (Superfecundation): যমজদের পৃথক বাবাও থাকতে পারে। ১৮১০ সালের একটি ঘটনা বেশ আলোচিত হয়। এক মার্কিন নারী একটি কৃষ্ণাঙ্গ এবং একটি শ্বেতাঙ্গ যমজের জন্ম দেন। এটি ঘটেছিল একই সাথে একজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং একজন শ্বেতাঙ্গ সঙ্গীর সাথে সম্পর্কের কারণে।