ক্রিস্টোফার কলম্বাস জানতেন যে পৃথিবী গোলাকার। তিনি ভেবেছিলেন, সোজা-পথে ভারতে পৌঁছানোর বিকল্প হিসেবে পশ্চিম দিকে একটি সমুদ্রপথ অবশ্যই পাওয়া যাবে। তাই নৌবহর নিয়ে এক দুঃসাহসিক সমুদ্র অভিযানে বেরিয়েছিলেন।
কিন্তু দু’টো ভুল করেছিলেন তিনি:
একটি হচ্ছে সমুদ্রপথে পৃথিবী ঘুরে আসতে গেলে মাঝে আরও ভূখণ্ড থাকতে পারে। ছিলও তাই। এশিয়া পৌঁছানোর আগেই আমেরিকা মহাদেশ পেয়েছিলেন আর তা দেখেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে তথা এশিয়া পৌঁছে গেছেন।
কলম্বাসের দ্বিতীয় ভুল ছিল তিনি তার সময়ের প্রায় ১৭০০ বছর আগে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক গণিতবিদের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছিলেন। আজকের লিবিয়ায় অবস্থিত প্রাচীন গ্রিক শহর সাইরিনি’র (Cyrene) গণিতবিদ এরাটোস্থেনিস ২৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তার সময়কার অন্য যেকোনো বিজ্ঞানীর চেয়ে নিখুঁতভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেছিলেন। আর এজন্য এরাটোস্থেনিসকে পুরো পৃথিবী ঘুরেও আসতে হয়নি।
আধুনিক হিসেবে বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবীর পরিধি প্রায় ২৪,৯০০ মাইল বা ৪০,০৭৫ কিলোমিটার। কাজেই পশ্চিম দিকে এতটা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এশিয়া পৌঁছাতে হবে জানলে কলম্বাস অবশ্যই সে যুগের জাহাজ নিয়ে এই অসম্ভব যাত্রা করতেন না।
এরাটোস্থেনিস যেভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেছিলেন
এবার আসা যাক এরাটোস্থেনিস নিজ দেশের বাইরে না গিয়েও কিভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করলেন সে প্রসঙ্গে। সে যুগে আধুনিক লেজার বা স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
দক্ষিণ মিশরের একটি প্রাচীন শহর সাই-ইনি (Syene)। বছরে একদিন (২১ জুন) সেখানকার একটি কূপের ভেতর মধ্যাহ্নে সূর্যের আলোর একটুও ছায়া পড়ত না। এটি এরাটোস্থেনিসের জানা ছিল। অর্থাৎ সূর্য বছরের সেদিনটিতে সেখানে একেবারে খাড়াভাবে কিরণ দেয়। কিন্তু ঠিক একই দিনে একই সময়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় কিছুটা হলেও ছায়া পড়ত।
এরাটোস্থেনিস এখান থেকেই সিদ্ধান্তে আসেন যে পৃথিবী অবশ্যই গোলাকার। তিনি ধরে নেন সূর্যের আলো সমান্তরাল। পৃথিবী সমতল হলে সব জায়গাই মধ্যাহ্নের সূর্যের কারণে ছায়াহীন হবে। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় ছায়ার কোণ নির্ণয় করেন। এটি ছিল বৃত্তের ৫০ ভাগের একভাগ। কাজেই পৃথিবীর পরিধি হবে আলেকজান্দ্রিয়া এবং সাই-ইনির দূরত্বের ৫০ গুণ।
এরাটোস্থেনিসের হিসেবে ভুলের পরিমাণ সামান্য কয়েক শতাংশের বেশি ছিল না, যা ছিল তার সময়ের অন্য যে কারো চেয়ে নিখুঁত।