উদ্ধার অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রে তখন মহামন্দা চলছে, তবু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট সর্বাত্নক অনুসন্ধান কাজ চালানোর নির্দেশ দেন, কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছিল বিমানটির সন্ধানে। এমনিতেই কাজটি ছিল খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মত কঠিন। তার ওপর প্রশান্ত মহাসাগরের ঐ এলাকায় কিছু দ্বীপ রয়েছে যা জোয়ারে ডুবে যায় আবার ভাটার সময় জেগে ওঠে। এয়ারহার্টের বিমানটি বেশ বিস্তৃত এলাকাজুড়ে খুঁজতে হয়েছে। বিমানটি ঠিক কোথায় পড়েছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। খারাপ আবহাওয়ায় বিমান চালনা কঠিন হয়ে উঠেছিল। আর বিমানটির সাথে বেতার যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথেই প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশী চালায় যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। কিন্তু কিছুই পায় নি তারা। এরপর তারা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অংশে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী অনুসন্ধান কাজ বন্ধ করে। আর ১৯৩৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
অনুসন্ধান কাজের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী জনমানবশূন্য গার্ডনার দ্বীপ যা এখন নিকিমারোরো নামে পরিচিত সেখানে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। দ্বীপটি হাউল্যান্ড দ্বীপের ৬৪৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এয়ারহার্ট যে বেতার ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাংক ব্যবহার করছিলেন সে কম্পাংকেই কয়েকবার বেতার সংকেত গিয়েছিল দ্বীপটি থেকে। কিন্তু যুদ্ধজাহাটি থেকে উড়ে যাওয়া দু’টি বিমানের কোনটিই মানুষ থাকার কোন চিহ্ন পায় নি সেখানে।
সামাধান সূত্র
১৯৪০ সালে বৃটিশরা সেখানে যায় এবং জাহাজডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া লোক সেখানে ছিল এমন আলামত খুঁজে পায়। সেখানে নারী ও পুরুষদের ব্যবহার্য জুতার তলা বা সোল, মদের বোতল, সেক্সট্যান্ট রাখার বাক্স ইত্যাদি খুঁজে পায় তারা। ফলে এমন ধারণা তৈরি হয় যে এমেলিয়া এয়ারহার্টের বিমানটি হয়ত এ দ্বীপেই অবতরণে বাধ্য হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা হচ্ছে এয়ারহার্ট হাউল্যান্ড দ্বীপ খুঁজে না পেয়ে গার্ডনার দ্বীপের উপকূলে পানিতে (পাথরের ওপর) বিমানটি নামান। তখন ছিল ভাটার সময়। তারা কাছাকাছি ক্যাম্প করেন এবং বিমানে ফিরে এসে বেতার সংকেত পাঠান। কিন্তু পরের কয়েক দিনে জোয়ারে বিমানটি ডুবে যায়। আর এয়ারহার্ট-নুন্যানও পানির অভাবে মারা যান, কারণ দ্বীপটিতে পানির কোন উৎস ছিল না। এক সপ্তাহ পর অনুসন্ধানকারী বিমান এসে কিছু পায় নি।
পরে জানা যায় তারা ভুল ম্যাপ অনুসরণ করে বিমান চালাচ্ছিলেন। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে হারিয়ে যায় তাদের বিমানটি। এমনও বলা হয় বিমানটিতে ঠিকমত জ্বালানি ভরা হয় নি, তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছার আগেই বিমানটি পড়ে গিয়েছিল।
সমাধান হয়েও যেন হল না
১৯৪০ সালে গার্ডনার দ্বীপ থেকে যে দেহাবশেষ আনা হয় তা একজন চিকিৎসক পরীক্ষা করেন। কিন্তু সে সময় ডিএনএ পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আর দেহাবশেষ হারিয়ে যাওয়ার কারণে সংরক্ষণ করা যায় নি। ১৯৯০ সালে বিশেষজ্ঞগণ ঐ চিকিৎসকের নোট দেখে সিদ্ধান্তে আসেন যে হাড়গুলো ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত কোন নারীর। বলাবাহুল্য দেহাবশেষ পাওয়া গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এখন একটি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব ছিল।
অনুসন্ধান কাজ চলছে আজও
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিমানগুলোর উদ্ধারকারীদের আন্তর্জাতিক একটি জোট (The International Group for Historic Aircraft Recovery) তাদের অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গতবছর (২০১৩) তারা জানায় সোনার চিত্র (শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে নেয়া চিত্র) ব্যবহার করে দক্ষিণে নিকুমারোরো দ্বীপের পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের ১৮৩ মিটার নিচে ৭ মিটার দীর্ঘ একটি বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা এয়ারহার্টের বিমান হতে পারে।
এ বছরের শেষ দিকে (সেপ্টেম্বর, ২০১৪) এক মাসব্যাপী আরেকটি অনুসন্ধান চালানো হবে। নিকুমারোরো দ্বীপের জলসীমায় সমুদ্র গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালানো হবে। মানুষ নিয়ন্ত্রিত রোবট পানির নিচে পাঠানো হবে স্থিরচিত্র এবং ভিডিওচিত্র নেয়ার জন্য। এছাড়া আরেকটি দল দ্বীপটির উপকূল এবং জঙ্গলে ক্যাম্প স্থাপনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা তার অনুসন্ধান চালাবে।
এয়ারহার্টের সঙ্গে শেষবার যখন কোস্ট গার্ড কর্মীদের বেতার যোগাযোগ হয় তখন তিনি জানিয়েছিলেন তারা অল্প উচ্চতায় ৩০৪ মিটার ওপর দিয়ে ঘন্টায় ১৬১ কিলোমিটার বেগে উড়ছিলেন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে পানির নিচে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি নয়, তাই মনে করা হচ্ছে বিমানটি প্রায় অবিকৃতই থাকবে এবং সেটিই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এমেলিয়া এয়ারহার্টকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের ট্রেলার
এমেলিয়া এয়ারহার্টের ওপর একটি ভিডিও প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার