
যেভাবে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু উল্টে যাওয়ার কথা জানা গেল
আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা উত্তপ্ত গলিত শিলায় ধাতব অক্সাইড থাকে। গলিত শিলায় থাকা ধাতব অক্সাইড পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর বিন্যস্ত হয়। কাজেই আগ্নেয়-শিলায় থাকা ধাতব অক্সাইডের বিন্যাস এবং শিলার বয়স নির্ণয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ বছর আগে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু কোথায় ছিল সেটি জেনে নেয়া যায়। আগ্নেয়-শিলায় ধাতব অক্সাইডের বিন্যাসই বলে দিচ্ছে গত ১০ কোটি বছরে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু ১৭০ বার অবস্থান পাল্টেছে। অর্থাৎ উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুর জায়গা নিয়েছে আর দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুর জায়গা নিয়েছে।
মেরুর অবস্থান বদলের কারণ

চৌম্বক মেরু কেন দ্রুত হারে বদলাচ্ছে
প্রচলিত তত্ত্ব হচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে আর এর ফলে তরল ম্যাগমার স্তর ছোট হয়ে আসছে সেই সাথে আরও উত্তপ্ত কঠিন অংশ যা ইনার কোর নামে পরিচিত তার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে তরল শিলার প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে এবং পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র আগের চেয়ে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে যার ফল আরও বেশি হারে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু বদলে যাওয়া।
তবে চৌম্বক মেরু রাতারাতি বদলে যায় না। চৌম্বক মেরু বদলে যেতে এক শতাব্দী থেকে শুরু করে ২০ হাজার বছর লেগে যেতে পারে।
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এখন প্রতি দশকে ৫ শতাংশ হারে কমছে তাই অনেকেই মনে করছেন আমরা হয়ত চৌম্বক মেরু বদলে যাওয়ার একটি পর্যায়ের মধ্যে আছি। অবশ্য সবাই এ ধারণার সাথে একমত নন। চৌম্বক মেরু বদলে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে চৌম্বকক্ষেত্র না থাকলেও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ক্ষতিকারক রশ্মির অনেকটা আটকে দেবে। আর চৌম্বক মেরুর অবস্থান বদলের সময় পৃথিবীর জীবজগৎ বিলুপ্তির আশংকার মুখে পড়েছে এমন প্রমাণ নেই। তবে এ সময়ে চৌম্বকক্ষেত্রের অনুপস্থিতিতে সূর্য থেকে ছুটে আসা চার্জিত কণিকা সরাসরি পৃথিবীতে প্রবেশ করবে যার ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বা পাওয়ার গ্রিড এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটবে। চৌম্বক মেরু বদলে যাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হওয়ায় এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ আপাতত নেই।










