জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাধারণ কিছু অংশ:-
বাঁধ: অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি ধরে রাখার জন্য বাঁধ তৈরি করা হয়। ফলে বিশাল জলাধার তৈরি হয়। যা বিনোদনের জায়গা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। আমাদের কাপ্তাই লেক এর উদাহরণ।
পানির প্রবেশপথ : অভিকর্ষের কারণে এখান থেকে পানি সুড়ঙ্গপথে টার্বাইনের দিকে অগ্রসর হয়।
টার্বাইন: পানি যখন টার্বাইনের বিশাল ব্লেডে আঘাত করে তখন টার্বাইন ঘুরতে শুরু করে। টার্বাইনের সাথে জেনারেটর সংযুক্ত থাকার কারণে সেটাও ঘুরতে শুরু করে। ফলে বিদুৎ উৎপন্ন হয়। সবচেয়ে প্রচলিত টার্বাইন হচ্ছে ফ্রান্সিস টার্বাইন। যা দেখতে অনেকটা বাঁকানো ব্লেড সমেত চাকতির মত। এর ওজন ১৭২ টন হতে পারে, আর মিনিটে ৯০ বার ঘুরতে পারে।
জেনারেটর: টার্বইন ঘুরতে শুরু করলে জেনারেটরও ঘুরতে শুরু করে। জেনারেটরের বিশাল বিশাল চুম্বক তামার তারের কুন্ডলীর মধ্যে ঘুরতে শুরু করলে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় (electromagnetic induction) আবেশ ঘটে,ফলে এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
তারের কুন্ডলীর মধ্যে যখন চুম্বক নাড়ানো হয় তখন চুম্বকের প্রভাবে ইলেকট্রনও তাড়িত হয়। আর ইলেকট্রনের প্রবাহই হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ। কাজেই জেনারেটরে ফ্যারাডের সূত্রানুসারে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
যদি একটি তারকে এমনভাবে কোন চুম্বক ক্ষেত্রে নাড়ানো হয় যে সেটি চুম্বক বলরেখা অতিক্রম করে তবে তারটিতে তড়িৎচালক বল বা বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। তারটির প্রান্ত দুটিকে যুক্ত করা হলে সেখানে ততক্ষণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে যতক্ষণ তারটি নাড়ানো হবে। এ নীতি ব্যবহার করে জেনারেটর তৈরি হয়।
অন্যভাবে বললে চুম্বক ইলেকট্রনকে চালিত করে আর ইলেকট্রনের প্রবাহই হল বিদ্যুৎ।
ট্রান্সফরমার বা রুপান্তরক: এই ট্রান্সফরমার প্রাপ্ত এসি বিদ্যুৎ প্রবাহকে উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহে রুপান্তরিত করে। দূরে পাঠানোর জন্য উচ্চবিভব উপযুক্ত কারণ তাতে অপচয় কম।
সরবরাহ লাইন: প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চারটি তার বের হয়। একটি গ্রাউন্ড বা কমন আর বাকি তিনটি তার তিনটি ফেজের বা দশার জন্য,যা একই সাথে উৎপন্ন হয়।
নির্গমণ পথ: এ পথে পানি পুনরায় মূল প্রবাহে ফিরে যায়।
জলাধারের পানিকে সঞ্চিত শক্তির সাথে তুলনা করা যায়। যখন সুড়ঙ্গ পথ উন্মুক্ত করা হয় হয় তখন পানি টার্বাইনের দিকে অগ্রসর হয়, এর গতির কারণে এটি গতিশক্তি অর্জন করে।
উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১. প্রবাহিত পানির আয়তন
২. টার্বাইন হতে পানি পৃষ্ঠের দূরত্ব
তবে কিছু কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি জলাধার ব্যবহার করে। একটি ওপরে, আরেকটি নিচে। ওপরেরটি থেকে সাধারণভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। কিন্তু ব্যবহৃত পানি নদীর মূল প্রবাহে না দিয়ে নিচের জলাধারে পাঠানো হয়। অফপিক আওয়ারে সেখানে বিপরীত টার্বাইন ব্যবহার করে পানিকে ওপরের জলাধারে নিয়ে আসা হয়। এধরনের প্লান্ট হতে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশি পানি পাওয়া সম্ভব হয়।
জলবিদ্যুৎ সারা বিশ্বে
২০০২ সালে বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত শক্তির ১৭ ভাগ ছিল জলবিদ্যুৎ। আর নরওয়ের মোট উৎপাদিত শক্তির ৯৯ ভাগ জলবিদ্যুৎ। কঙ্গো ১০০ ভাগ, ব্রাজিল ৮৩ ভাগ। কানাডা ২০০২ সালে ৩১৫.৫ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা বিদু্ৎ উৎপাদন করেছে।
ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ে যৌথভাবে Itaipu জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে প্রায় ১২,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
দ্বিতীয় বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ভেনিজুয়েলার ক্যারনি (Caroni) নদীতে। উৎপাদন ক্ষমতা ১০৩০০ মেগাওয়াট।
গঙ্গা নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রাপ্তির সম্ভাবনা ১৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যার ৪০ ভাগ ভারতে বাকিটা নেপালে। ভারত এর কিছুটা ব্যবহার শুরু করছে।