বজ্রপাত যেভাবে হয়

শিহাব উদ্দিন আহমেদ | সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫

lightning-2প্রকৃতির সুন্দরতম আর ভয়াবহতম ঘটনাগুলোর একটি বজ্রপাত। বিদ্যুৎ চমকানোর সময় যে স্ফুলিঙ্গ আমরা দেখি তার তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার চেয়েও বেশি এবং এসময় সৃষ্ট শকওয়েভ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বজ্রপাতের সময় বাতাসের মধ্য দিয়ে উচ্চমাত্রার তড়িৎ প্রবাহ বা তড়িৎ ক্ষরণের কারণে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়।

বিদ্যুৎ চমকায় পানিচক্রের কারণে

আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর প্রক্রিয়াটি শুরু হয় পানি চক্রের মাধ্যমে। সূর্যের উত্তাপে পানি বাষ্পীভূত হয়। তাপশক্তি পেয়ে পানির অণুগুলো গ্যাসের অণুর মত ওপরের দিকে উঠতে থাকে। বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিক থাকা শীতল স্তরে গিয়ে পানির অণুগুলো তাপ হারিয়ে ঘনীভূত হওয়ার মাধ্যমে মেঘে পরিণত হয়। এই মেঘ আরও ঠাণ্ডা হয়ে তরলে পরিণত হয়। পৃথিবীর আকর্ষণে এই তরল পানি আবার বৃষ্টি হয়ে ভূমিতে ফিরে আসে। তবে বেশি ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করলে পানির বাষ্প ঘন হয়ে তুষার কিংবা শিলায় পরিণত হয়।

মেঘ যেভাবে চার্জগ্রস্ত হয়

lightning-1পানিচক্রের এই প্রক্রিয়াতে মেঘ চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মেঘের ওপরের অংশ ধনাত্মক চার্জগ্রস্ত হয় আর নিচের অংশ ঋণাত্মক চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মেঘ কেন চার্জগ্রস্ত হয় তা নিয়ে মতভেদ আছে। একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে জলীয় বাষ্প ওপরের দিকে ওঠার সময় মেঘের নিচের অংশের সাথে সৃষ্ট ঘর্ষণে ওপরের দিকে উঠতে থাকা জলীয় বাষ্প কণা থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই ইলেকট্রনগুলো মেঘের নিচের অংশে জমা হয় আর ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়া বাষ্প ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে মেঘের নিচের অংশ ঋণাত্মক চার্জগ্রস্ত হয় আর ওপরের অংশ ধনাত্মক চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়ায় অনেক সময় মেঘের নিচের অংশ এতটাই ঋণাত্মক চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে তা ভূপৃষ্ঠের ইলেকট্রনগুলোকেও বিকর্ষণ করে গভীরে পাঠিয়ে দেয়। ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরের অংশ ধনাত্মক চার্জগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভূপৃষ্ঠ আর মেঘের মধ্যে বিভব পার্থক্য সাংঘাতিক মাত্রায় হলে এটি নিজে থেকেই বাতাসকে আয়নিত করে বিদ্যুৎ প্রবাহের পথ করে নেয় যাকে বজ্রপাত বলা হয়। তবে বজ্রপাত কেবল মেঘ থেকে ভূমিতে হয় না, মেঘ থেকে মেঘেও হয়।

বজ্রপাতের প্রচণ্ড উত্তাপে বাতাসের যে হঠাৎ প্রসারণ হয় তার ফলেই বজ্রপাতের শব্দ তৈরি হয়। শব্দের বেগ আলোর বেগের চেয়ে কম বলে বজ্রপাতের শব্দ কিছুটা পরে শুনতে পাওয়া যায়।

Print Friendly, PDF & Email
  • আরও পড়ুন:

  • প্রশ্ন ও উত্তর: