ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৯ সময়কালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সাময়িকভাবে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। রাজতন্ত্রে রাজার হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকতো। আর নতুন ফরাসি প্রজাতন্ত্রে অন্তত কাগজে কলমে নাগরিক স্বাধীনতা আর সমতার বিষয়টি মেনে নেয়া হয়। ফ্রান্সের ভেতরে বাইরে ফরাসি বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল। ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয় এ বিপ্লবকে।
বিপ্লবের দশ বছর সময়কালে প্রথমে ফ্রান্স পরিবর্তিত হয়। তারপর একের পর এক নতুন সরকার এসে রাজতন্ত্রে প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক-সামাজিক কাঠামো বদলে ফেলতে শুরু করে। কোন সরকারই চার বছরের বেশি টেকেনি। কিন্তু সরকারগুলোর হাতে আইন পরিবর্তনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্যে ছিল অধিকার ও সংবিধান সম্পর্কিত কিছু বিল, আইনগতভাবে সব নাগরিকের সমতা নিশ্চিত করা, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গির্জাগুলোকে রাষ্ট্রের সাথে একীভূত করা, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ঢেলে সাজানো, ল’ কোডের পরিবর্তন আনা ইত্যাদি।
এসব পরিবর্তন ইউরোপের অনেক জায়গায় কার্যকর করা হয়। কিছু জায়গায় এ পরিবর্তন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু অনেক জায়গায় ফরাসী সামরিক বাহিনী পরিবর্তন আনতে বল প্রয়োগ করে যা ফরাসি বিপ্লবের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এরপর ১৭৯৯ থেকে ১৮১৫ সময়কালে ফরসি সমরনায়ক নেপোলিয়নও এতে যোগ দেন।
ইউরোপে এবং ইউরোপের বাইরে যারা নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখছিলেন তাদের জন্য ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগে পর্যন্ত ফরসি বিপ্লব অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল।