সাংঘাতিক বিষাক্ত নার্ভ গ্যাস হচ্ছে সারিন (Sarin)। রাসায়নিক সংকেত, C4H10FO2P। স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে অকার্যকর করে দেয় এ গ্যাস। সারিন গ্যাসের কার্যকারিতা প্রাণঘাতী সায়ানাইডের চেয়েও ২৬ গুণ বেশি। এক ঘনমিটার আয়তনের একটি প্রকোষ্ঠে কাউকে রেখে মাত্র ১০০ মিলিগ্রাম সারিন গ্যাস প্রয়োগ করলে মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যু হবে।
এই গ্যাস বর্ণ ও গন্ধহীন হওয়ার কারণে আক্রান্ত হওয়ার আগে গ্যাসের উপস্থিতি বোঝা যায় না। বাতাসের চেয়ে ভারী হওয়ায় কোথাও এ গ্যাস ছেড়ে দিলে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত (আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল) থাকতে পারে।
১৯৩৮ সালে অধিকমাত্রায় কার্যকর কীটনাশক তৈরি করতে গিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীরা সারিন গ্যাস তৈরি করে ফেলেন। পরে জার্মান সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে। তবে তার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।
ক্ষতিকারক প্রভাব
সারিন গ্যাসের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়ায় পেশীর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। খিচুনি শুরু হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে পড়তে পারে। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে আছে চোখে ঝাপসা দেখা, দূর্বলতা, ডায়রিয়া, চোখে পানি আসা, বমি, মাথা ব্যথা, ইত্যাদি। সারিন গ্যাসের প্রভাবে ফুসফুসের পেশী অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে, ফলশ্রুতিতে দমবন্ধ হয় মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে সারিন গ্যাস প্রয়োগের মাত্রার ওপর নির্ভর করছে কি ধরনের লক্ষণ দেখা যাবে এবং কতটা সময় পরে দেখা যাবে।
সারিন গ্যাস যে শুধু নি:শ্বাসের মাধ্যমেই প্রবেশ করে তা নয়, চামড়ার মাধ্যমেও এ গ্যাস শরীরে প্রবেশ করে।
সারিন গ্যাসের কারণে খাদ্য এবং পানি সরবরাহ দূষিত হয়ে পড়তে পারে। তবে এ গ্যাসের বিষক্রিয়ারোধী রাসায়নিক বা antidote রয়েছে।
ব্যবহার
যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক পরাশক্তিই সারিন গ্যাসের মজুদ গড়ে তুলেছিল। তবে এখন সারিন গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গত শতাব্দীর শেষদিকে জাপানের একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সারিন গ্যাস ব্যবহার করে আলোচনায় এসেছিল। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে কুর্দী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরানের সৈন্যদের বিরুদ্ধেও ইরাক সারিন গ্যাস ব্যবহার করেছিল। সে সময় ইরানী সৈন্যদের অবস্থানের তথ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ইরাকের কাছে সরবরাহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বসাম্প্রতিক ব্যবহার ঘটেছে সিরিয়ায়। তবে সারিন গ্যাস বিদ্রোহীরা নাকি সরকারী সৈন্যরা ব্যবহার করেছে সেটা স্পষ্ট নয়।