রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বৈমানিক, এমেলিয়া এয়ারহার্ট

শিহাব উদ্দিন আহমেদ | এপ্রিল ১১, ২০১৪

Amelia Earhart Photoযুক্তরাষ্ট্রের সেলিব্রেটি বৈমানিকে পরিণত হয়েছিলেন এমেলিয়া এয়ারহার্ট। বিমান চালিয়ে অতলান্তিক বা আটলান্টিক পাড়ি দেয়া প্রথম নারী বৈমানিক তিনি। ১৯৩৭ সাল, দুই আসনের লকহিড ইলেকট্রা বিমান নিয়ে দীর্ঘতম পথে অর্থাৎ বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবী প্রদক্ষিণের অভিযানে বেরিয়েছিলেন, সাথে ছিলেন নেভিগেটর ফ্রেড নুন্যান। কিন্তু অভিযানের শেষ পর্যায়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেবার সময় তাদের বিমানটি নিখোঁজ হয়, যার ধ্বংসাবশেষ আজও পাওয়া যায় নি। অনেক প্রমাণ এমনকি মানুষের দেহাবশেষ পাওয়ার পরও রহস্যই থেকে গেছে বিষয়টি।

রহস্য আর গুজব

যখন তথ্য প্রামাণের সাহায্যে কোন রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হয় না, তখন বিভিন্ন গল্প প্রচার পায়। এমেলিয়া এয়ারহার্টের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নানা গল্পের ডালপালার বিস্তৃতি ঘটেছে। ৭০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিমানটি কি স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? নিশ্চিত হওয়ার মত কোন ব্যাখ্যা হাজির করতে পারছে না কেউ।

বিভিন্ন গল্প

  • বলা হয় ৩৯ বছর বয়সী এমেলিয়া এয়াহার্ট ছিলেন আমেরিকান গোয়েন্দা, তিনি জাপানের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতেই বেরিয়েছিলেন। জাপানীরা তাকে ধরে হত্যা করে। অবশ্য তার বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর জাপানও অনুসন্ধান কাজ চালিয়েছিল।
  • আবার এমনও বলা হয় জাপানীরা তাকে ধরে তাদের বেতারে কাজ করতে বাধ্য করেছিল।
  • তিনি সফলভাবেই ফিরেছিলেন এবং অন্য একটি পরিচয় গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাকি জীবন কাটান।
  • তাকে ভিনগ্রহের প্রাণীরা অপহরণ করেছে।

এমেলিয়া এয়ারহার্টের জীবন

Amelia Earhart Photoজন্ম ১৮৯৭ সালে, ২৩ বছর বয়সে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন এবং ২৬ বছর বয়সে বিমান চালনার লাইসেন্স পান। তিনি পৃথিবীর ১৬তম নারী বৈমানিক যিনি লাইসেন্স পেয়েছিলেন।

১৯২৮ সালে প্রথম নারী হিসেবে তিনি বিমানযোগে আটলান্টিক অতিক্রম করেন। এর কারণে তিনি বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই ফ্লাইটে বিমান চালনার দায়িত্বে তিনি ছিলেন না। এ নিয়ে তার অস্বস্তিও ছিল। ১৯৩২ সালে প্রথম নারী হিসেবে তিনি একাই বিমান চালিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেন। ১৯৩৫ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাওয়াই থেকে ক্যালিফোর্নিয়া উড়ে যান।

বিমান চালনায় দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে নানা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বিমান চালনায় তার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে নারীদের আত্নবিশ্বাস যোগানোর চেষ্টা করেন, সেই সাথে নারীদের বিমান চালনায় উৎসাহিতও করেন। তিনি মনে করতেন, পুরুষ যা করেছে, নারীরও তা করা উচিত।

পৃথিবী প্রদক্ষিণ অভিযান

১৯৩৭ সালের মার্চে তিনি বিমান নিয়ে বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবী প্রদক্ষিণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু টায়ার ফেটে যাওয়ায় বিমানটি অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর বিমানটি মেরামত করে আবার অভিযানের উদ্যোগ নেন। তারা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফ্লোরিডা উড়ে যান। এরপর দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা হয়ে পৌঁছে যান নিউ গিনি। প্রায় ২২,০০০ মাইল অতিক্রম করেন তারা। এরপর প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রমের মাধ্যমে তাদের অভিযান শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রশান্ত মহাসাগরে কয়েকটি দ্বীপে বিরতি দিয়ে তাদের এগোনোর কথা ছিল। প্রথমে নামার কথা ছিল একটি ছোট দ্বীপে। কিন্তু সেখানে তারা অবতরণ করেননি। হারিয়ে যায় তাদের বিমান।

Print Friendly, PDF & Email
  • আরও পড়ুন:

  • প্রশ্ন ও উত্তর: