খাদ্যপণ্য, বিশেষত পানীয় জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতি হচ্ছে পাস্তুরাইজেশন। বিশেষ পদ্ধতিতে উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োগে এ কাজটি করা হয়।
১৮৬৫ সালে ফরাসী রসায়নবিদ লুই পাস্তুর এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। দুধ এবং মদ সংরক্ষণে এ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হলেও এখন অনেক পণ্য সংরক্ষণেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
আগে বাড়িতে বা বাড়ির খুব কাছে গরু থাকতো, যেখান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হত। কিন্তু নগরায়ণের ফলে ভোক্তার কাছে দুধ পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় সময়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিংশ শতকের শুরু দিকে ইউরোপে দুধের কারণে যক্ষাসহ নানা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ পটভূমিতেই দুধের পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি চালু হয়।
কিভাবে
পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে সব ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করা না গেলেও অধিকাংশ জীবাণুই ধ্বংস করা সম্ভব হয়। পানীয়কে উচ্চ তাপমাত্রায় নিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে গেলে পানীয়ের স্বাদ-গন্ধ এবং পুষ্টিমান নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। এজন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জীবাণু ধ্বংস করার পর দ্রুত শীতল করতে হয়, আর উচ্চ তাপমাত্রায়ও বেশি সময় রাখা হয় না।
পানীয় কতদিন সংরক্ষণ করা যাবে সেটা নির্ভর করে কতটা সময় এবং কি তাপমাত্রায় পাস্তুরাইজেশন করা হচ্ছে তার ওপর। এছাড়া পানীয়ের পিএইচ (pH) মাত্রা বেশি হলে তাপমাত্রাও বেশি প্রয়োজন হয়।
যেমন দুধের ক্ষেত্রে ৬৩০ সে. তাপমাত্রা প্রয়োগ করেলে ৩০ মিনিট রাখতে হবে, ৭২০ সে. তাপমাত্রা প্রয়োগ করলে ১৫ সেকেন্ড রেখে ৭০ সে. তাপমাত্রায় শীতল করতে হবে। স্বল্প সময়ের উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমানের ক্ষতি তুলনামূলভাবে কম হয়। এসব দুধ অল্প তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োগ
পানি প্রবাহের মাধ্যমে ধাতব নল বা দেয়াল উত্তপ্ত করে তার ভেতর দিয়ে দুধ বা পানীয় প্রবাহিত করা হয়।
ইউএইচটি (UHT) পদ্ধতি
এটি হচ্ছে আলট্রা হাই টেমপারেচার পাস্তুরাইজেশন। এ পদ্ধতিতে ১ থেকে ২ সেকেন্ড সময় ১৩৮০ থেকে ১৫০০ সে. তাপমাত্রায় দুধ রেখে জীবাণুমুক্ত প্যাকেট বা কনটেইনারে রাখা হয়। এসব প্যাকেট হিমায়ন যন্ত্র বা রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয় না, এমনিতেই ৬০-৯০ দিন ভালো থাকে।
হিমায়ন যন্ত্র ছাড়াই রাখা যায় বলে এ পদ্ধতি পৃথিবীর অনেক দেশে জনপ্রিয় হয়েছে। বাংলাদেশেও সাধারণ পদ্ধতির পাশাপাশি ইউএইচটি পদ্ধতিতে পাস্তুরিত দুধ বাজারজাত করা হচ্ছে।
ঝুঁকি
- পাস্তুরিত তরল দুধ বা অন্যান্য পানীয় সংরক্ষণে অনেক সময় কিছু রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। কারণ শুধু উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োগে সব জীবাণু ধ্বংস করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ উপযোগী করা যায় না।
- পাস্তুরাইজেশনের ফলে কিছুটা হলেও পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়।