উইলিয়াম শেকসপিয়র এর জীবনী (Biography of William Shakespeare in Bangla) | পড়ার টেবিল থেকে

উইলিয়াম শেকসপিয়র Photo

উইলিয়াম শেকসপিয়র

(William Shakespeare)


উইলিয়াম শেকসপিয়র [২৬ এপ্রিল, ১৫৬৪ (ব্যাপ্টাইজড) - মৃত্যু ২৩ এপ্রিল, ১৬১৬]: অনেকের মতে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার, সারাবিশ্বে সমাদৃত তিনি। অনেক সময় ইংল্যান্ডের জাতীয় কবিও বলা হয় তাঁকে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন রহস্যেঘেরা। তাঁর জন্মতারিখ নিশ্চিত করা যায়নি। গির্জার রেকর্ড থেকে দেখা যায় ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল ঘটা করে ধর্মীয় রীতি মেনে গির্জায় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল। তাই ধরে নেয়া হয় এর কয়েকদিন আগে তাঁর জন্ম হয়ে থাকবে।

জার্মান কবি গ্যায়টে বলেছিলেন, ঘড়ির অন্তরকে ভাল করে জানতে হলে শুধু কাঁচটি সরিয়ে ডায়াল পরীক্ষা করলে চলে না, ডায়ালেরও নীচে কলকব্জা পরীক্ষা করতে হয়। শেকসপিয়র তেমনি ভাবে মানুষের অন্তর্লোক পর্যন্ত দেখে নিয়েছিলেন।

খুব অল্পবয়সে নাট্যজগতের সাথে পরিচয় হয়েছিল শেকসপিয়রের। য়্যাভন নদী-পাড়ের স্ট্র্যাটফোরড উপশহরে তাঁর জন্ম হয়। শেকসপিয়রের বাবা ছিলেন এ শহরেরই অলডারম্যান। পদটি বেশ সম্মানের। অনেকটা মিউনিসিপাল কমিশনারের মত। পরে বেইলিফ পদে উন্নীত হয়েছিলেন তিনি। সেসময় দু’টি থিয়েটার কোম্পানি শহরটিতে গিয়েছিল। নিজের আভিজাত্য বজায় রাখতে শেকসপিয়রের বাবা জন শেকসপিয়র তাদের দাওয়াত করেন। তখন খুব কাছে থেকে নাটক দেখার সুযোগ হয় বালক শেকসপিয়রের। তবে স্রোত খুব বেশিদিন শেকসপিয়রের অনুকূলে থাকেনি।

বাবার  ব্যবসায় ভাটা দেখা দিলে তেরো বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করতে হয়। কিছুদিনের মধ্যে বিয়েও করে ফেলেন তিনি আর সে দায়িত্ব সামলাতে গিয়েই সিদ্ধান্ত নেন দুই মেয়ে আর এক ছেলের ভরণপোষণের জন্য লন্ডনে গিয়ে অন্য কিছু করতে হবে।

তবে ভালো কিছু করার সুযোগ তার হয়নি। সেখানে একটি নামকরা নাটক কোম্পানিতে ঘোড়া দেখাশোনার চাকরি নেন। যারা নাটক দেখতে আসতেন তারা তাদের ঘোড়াগুলো শেকসপিয়রের হেফাজতে দিয়ে নাটক দেখতে ঢুকে পড়তেন।

বিশ্বস্ততার জন্য সুনাম ছড়িয়ে পড়ে শেকসপিয়রের। কিছুদিনের মধ্যে সহকারী হিসেবে কয়েকটি ছেলেকে সাথে নেন আর তাদের ওপর ঘোড়া দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে নিজেও নাটক দেখতে শুরু করেন। এটি ছিল তাঁর নীরব সাধনার শুরু। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর নাটক প্রকাশিত হতে শুরু করে, মঞ্চস্থ হয়, নিজেও বেয়ারা-ভৃত্যের মত চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার ও শিল্পীরা শুরুতে শেকসপিয়রকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি। তবে শেকসপিয়র তার প্রতিভার স্বীকৃতি ঠিক আদায় করে নেন। জীবদ্দশাতেই তাঁকে সে সময়ের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার এবং কবি হিসেবে মেনে নেন সবাই। সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি ব্যবসায়ীও বলা যায় তাকে। অংশীদারদের সাথে নিয়ে ১৫৯৯ সালে টেমস নদীর দক্ষিণ পাড়ে গ্লোব থিয়েটার নির্মাণ করেন। এছাড়া নিজ শহর স্ট্র্যাটফোর্ডের কাছে হাউজিং ব্যবসা থেকেও বেশ টাকা কামিয়েছিলেন যা পরবর্তী সময়ে তাঁকে নির্বিঘ্নে সাহিত্য সাধনার সুযোগ করে দেয়।

আসলেই কি শেকসপিয়র নামে কেউ ছিলেন?

শেকসপিয়রের নাটক, সনেট আর কবিতার বাইরে তাঁকে জানার খুব বেশি সুযোগ নেই। আরেকটি সূত্র হচ্ছে গির্জা এবং কোর্টের নথিপত্র। তাই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে সাহিত্যকর্মগুলোর জন্য শেকসপিয়র এত সমাদৃত সেগুলো হয়তো আদতে তাঁর হাতে লেখাই হয়নি। শেকসপিয়র কেবল স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলেন। এরকম একজন মানুষের পক্ষে এমন সব সাহিত্যকর্ম সম্ভব নয়।

তবে জন্মের পর গির্জায় শেকসপিয়রকে ব্যাপ্টাইজ করা, বিবাহ ইত্যাদির নথিপত্র যেহেতু পাওয়া গেছে তাই বলা হয় শেকসপিয়র নামে কেউ সত্যিই সেসময় জন্মেছিলেন। কিন্তু তিনি সাহিত্য-স্রষ্টা কিনা সে প্রশ্ন থেকে যায়।

তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এরকম ধারনাকে প্রশ্রয় দেননা। তাদের মতে সেসময়কার অন্যান্য সাহিত্যিকের জীবন সম্পর্কেও খুব একটা জানা যায় না আর তাদেরও তেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। শেকসপিয়র যেসময় স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তখন স্কুলে ল্যাটিন ভাষার পাশাপাশি ক্ল্যাসিক সাহিত্যের সাথে পরিচয় ঘটানো হত। হয়তো এই প্রাথমিক শিক্ষাই নাট্যকার ও কবি শেকসপিয়রের ভিত তৈরি করে দিয়েছিল। নাট্যকার শেকসপিয়রের অস্তিত্বের পক্ষে অবশ্য আরও কিছু দাপ্তরিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যার মধ্যে রয়েছে সেসময়কার সাহিত্য সামালোচকদের লেখা।

আরও দেখুন: উইলিয়াম শেকসপিয়র এর বিখ্যাত উক্তিগুলো

আরও জীবনী:






উক্তি এবং বিখ্যাত ব্যক্তি অনুসন্ধান