আবুল হাশিম [জন্ম: ২৭ জানুয়ারি, ১৯০৫ – মৃত্যু: ৫ অক্টোবর, ১৯৭৪] ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় একজন মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবী। তিনি আজকের ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কাশিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী আবুল কাশেম ছিলেন সেসময়কার বাংলায় একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। আবুল হাশিম বাংলাদেশের সুপরিচিত বাম ঘরানার রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের পিতা।
আবুল হাশিম ১৯২৮ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৯৩১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন এবং সে বছরই বর্ধমান জেলা বারে যোগ দেন।
১৯৩৬ সালে বর্ধমানের মুসলিমরা তাঁকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করে। এটি ছিল মোহনদাস গান্ধী ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তির মুখে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক দরকষাকষির মাধ্যমে অর্জিত ম্যাকডোনাল্ড এওয়ার্ডের মাধ্যমে গঠিত প্রথম আইনসভা। পরের বছর আবুল হাশিম মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে তিনি এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের আরেকটি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
১৯৪১ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শেষ পর্যন্ত তিনি এ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলায় মুসলিম লীগকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আবুল হাশিমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, বিশেষ করে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনগুলোয় মুসলিম লীগের সাফল্য লাভের পেছনে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন।
পরবর্তী সময়ে যখন ভারতের স্বাধীনতা লাভ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে তখন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগ দিয়ে অবিভক্ত বাংলা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা চালান। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সায় থাকলেও মোহনদাস গান্ধী এবং কংগ্রেস এতে বেঁকে বসে। এমনকি কলকাতাকেন্দ্রীক শিক্ষিত বাঙালি সমাজ যারা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিল তারা এসময় যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর আবুল হাশিম ভারতেই থেকে যান। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধীদলের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানে চলে আসেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০ ফেব্রুয়ারির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন। তাকে আটক করা হয় এবং ১৬ মাস কারাগারে কাটান। কারামুক্তির পর ‘খিলাফত-ই-রববানী পার্টি’ তে যোগ দেন। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির সভাপতি ছিলেন।
১৯৬০ সালে তিনি ঢাকাস্থ ইসলামিক একাডেমীর সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের ইসলামিক আইডিওলজি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রধান সমন্বয়ক নিযুক্ত হন।
বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তাঁর অনেকগুলো বই এবং নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম বই “The Creed of Islam” প্রকাশিত হয়। ইসলামিক একাডেমি (এ সময়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন) কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদের জন্য এবং অনুবাদক পরিষদ গঠন করলে সে কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আবুল হাশিম।
বঙ্গীয় রাজনীতিতে যে সময় তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সে সময়ের স্মৃতিকথা লিখেছেন In Retrospection বইয়ে। তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে Let us go to War এবং As I see it । তিনি বাংলায় সূরা ফাতিহার তাফসীর লেখেন, যেটি পরবর্তীতে আরবিতেও অনুবাদ করা হয়।
১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর তিনি ঢাকায় মারা যান।
আরও জীবনী: