নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (Nelson Rolihlahla Mandela) [জন্ম: জুলাই ১৮, ১৯১৮ - মৃত্যু: ডিসেম্বর ৫, ২০১৩] ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। একই সাথে দেশটিতে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতিও বলা হয় তাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সরকারের বর্ণবাদী নীতির বিপক্ষে সংগ্রাম এবং ত্যাগের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানে আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকদের আনুকূল্য পাওয়া অভিজাত শ্রেণীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জড়িয়ে পড়েন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি’তে যোগ দেন। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি মার্কসবাদ দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। গোপনে দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি’কে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ম্যান্ডেলা যুক্তি দেখান সশস্ত্র উপায়ে দাবি আদায় করতে হবে। এএনসি থেকেও এর বিরোধিতা করা হয়নি। ১৯৬২ সালে তাঁকে আটক করে সহিংসতা চালানোর অভিযোগে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়। পরের বছর তাঁর সশস্ত্র গোষ্ঠীর আরও অনেকের সাথে তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বন্দী অবস্থায় কাটাতে হলেও এ সময়টাতে ম্যান্ডেলার পরিচিতি বাড়তে তাকে। তাঁর প্রথম স্ত্রী দেশেবিদেশে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার ভেতরেই বিরোধীরা সংগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করে। গৃহযুদ্ধের আশংকাও দেখা দিয়েছিল। এ অবস্থায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা পিছু হটে এবং ম্যান্ডেলাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়।
১৯৯৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিশোধের পথে না হেঁটে সমঝোতার পথেই হেঁটেছিলেন তিনি আর নিজে মার্কসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হলেও সেধরনের সংস্কার আনার চেষ্টা করেননি। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন তিনি।
তাঁর বহু সম্মাননা আর পুরস্কারের মধ্যে নোবেল পুরস্কার অন্যতম। শান্তির পথে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যার সমাধান আনার জন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় তাঁকে।
আরও দেখুন: নেলসন ম্যান্ডেলা এর বিখ্যাত উক্তিগুলো
আরও জীবনী: